আলমডাঙ্গায় সবুজ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
আলমডাঙ্গায় তুষার আহম্মেদ সবুজ নামক যুবককে মোটরসাইকেলসহ পুড়িয়ে হত্যার মামলায় আসামীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে বাদেমাজু গ্রামবাসী আলমডাঙ্গা থানার সামনে সড়কে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভকারীরা হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানান। তারা অভিযোগ করেন, পুলিশ ৩ আসামীকে আটক করলেও হত্যার সাথে জড়িত সকল আসামীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। অবিলম্বে সমস্ত আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে বলে দাবি করেন তারা।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে নিহত তুষার আহম্মেদ সবুজের মা তসুরা বেগম, বাবা জয়নাল আবেদীন এবং মামা নাহারুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। মানববন্ধনে এলাকার প্রায় তিনশ' নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
নিহতের মা তসুরা বেগম বলেন, "গত মঙ্গলবার বিকেলে অজ্ঞাত একটি মোবাইলে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৯ পর্যন্ত তার সাথে যোগাযোগ ছিল, কিন্তু এরপর মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন রাতে বাড়ি না ফেরায়, আমরা আত্নীয়স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ করতে থাকি। পরদিন সকালে ফরিদপুর গজারিয়া মাঠে তার পোড়া লাশ পাওয়া যায়।" কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, "যারা আমার ছেলেকে মেরেছে, তাদের বিচার চাই। আমি চাই, সবুজ হত্যার বিচার হোক এবং খুনি সাগরের বিচারও দ্রুত সম্পন্ন হোক।"
নিহত সবুজের পিতা জয়নাল আবেদীন বলেন, "আমি একজন দরিদ্র কৃষক। আমার একমাত্র ছেলে, সবুজ, যার কাছে আমার সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাকে যারা নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি করছি।"
প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গজারিয়া মাঠ এলাকায় ১৩ নভেম্বর সকালে পুলিশ মোটরসাইকেলসহ তুষার আহম্মেদ সবুজের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে। সবুজ উপজেলার বাদেমাজু গ্রামের গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন'র ছেলে ছিলেন এবং পুরানো মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় করতেন।
গ্রামসূত্রে জানা যায়, ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় সবুজকে এক যুবকের ফোনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর সে আর বাড়ি ফেরেনি। পরের দিন তার পোড়া মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত শুরু করে।
এ ঘটনায় পুলিশ সাগর আলী ও জহুরুল ইসলাম নামক দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও একজন আসামী, নাজমুল হক পাপ্পু গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতরা হত্যার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে এবং আদালতে দোষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের আগে ফুড গোডাউন এলাকার কয়েকজনের সাথে বৈঠক করা হয়েছিল, যা তদন্তে উঠে এসেছে। ঘটনার সাথে আরও কিছুজন জড়িত রয়েছেন, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় আটক তিন আসামীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং পুলিশ হত্যাকারীদের ধরতে তৎপর রয়েছে।